Blockchain-ব্লকচেইন

ব্লকচেইন! বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি বিষয়। ব্লক চেইন কি, কিভাবে কাজ করে, কেনই বা ব্লকচেইন বিষয়ে এত কথা হচ্ছে? ব্লকচেইনের সাথে বিটকয়েন ও সমান সমান ভাবে উচ্চারিত একটি শব্দ। ব্লকচেইন কি, কিভাবে কাজ করে, ভবিষ্যতের জন্য কতটা কার্যকর এ প্রযুক্তি। কি রয়েছে এর নেপথ্যে? কেন মনে কারা হচ্ছে ভবিষ্যৎ পাল্টে দিতে পারে এই প্রযুক্তি। সম্ভাবনা রয়েছে যেমন, শঙ্কা ও রয়েছে তেমনই।

ব্লকচেইন একটি প্রযুক্তি। এটি অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে বিভিন্ন খাতে। কিন্তু ২০০৮ সালে ব্লকচেইন ব্যবহার করে বিটকয়েন নামক ক্রিপ্টো মুদ্রার আবিষ্কারের পর থেকে ব্লকচেইন সম্পর্কে মানুষ বেশি কৌতুহলী হয় এবং ব্যাপক ভাবে এর জনপ্রিয়তা পায়।

ডেটা বা তথ্য নিরাপদে ষ্টোর করতে এবং আদান-প্রদান করতে ব্লকচেইনের ব্যবহার হয়ে থাকে। এবং এখানে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজগুলো করা সম্ভব হয়। ডেটা বা তথ্য স্টোর করা এবং আদান-প্রদান করার জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নিরাপদ প্রযুক্তি হলো ব্লকচেইন। ব্লকচেইন এমন পদ্ধতিতে কাজ গুলো করে থাকে যে কারনে এটিকে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করা হয়।

ব্লকচেইনের মাঝে ডেটা স্টোর করার জন্য একাধিক ব্লক থাকে। প্রতিটি ব্লকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডেটা বা তথ্য থাকে। এবং তার নিজ ব্লক এর একটি আইডেন্টিটি নাম্বার এবং পূর্বের ব্লকের আইডেন্টিটি নাম্বার। এই আইডেন্টিটি নাম্বারকে হ্যাশ বলা হয়। এবং হ্যশ গুলো এক ব্লক থেকে আরেক ব্লকের সাথে যোগাযোগের ঠিকানার মতো কাজ করে। এগুলো একটি থেকে আরেকটি ইউনিক হয়ে থাকে।

 হ্যাশ দেখতে অনেকটা এমন হয়ে থাকে:  e37fhq375hdofiryGFDaOnjhds38744hdsgsh

 অর্থাৎ একটি ব্লকে তিনটি তথ্য থাকে:

১. ব্লকে ষ্টোর করা ডেটা

২. নিজ ব্লকের হ্যাশ

৩. পূর্বের ব্লকের হ্যাশ

 এভাবেই একটি ব্লক আরেকটির সাথে যুক্ত হয়ে একটি চেইন তৈরী করে। তাই একে ব্লকচেইন বলা হয়।

ব্লকচেইনের ডেটা ষ্টোর করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা পেলাম। কিন্তু ডেটা আদান প্রদান বা নিয়ন্ত্রণ করা হয় কিভাবে?

ব্লকচেইন এর তথ্য নিয়ন্ত্রণ এবং এটিকে আরো নিরাপদ করার আরও একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এটির ডিসেন্ট্রালাইজেশন। অর্থাৎ ব্লকচেইনের নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র একটি কম্পিউটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং দুনিয়ার যতগুলো কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক রয়েছে আর যারা এই নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রবেশ করেছে তারা সবাই এর নিয়ন্ত্রণকারী। আপনার ব্লকের অন্তর্ভূক্ত সকল ব্লকচেইন ইউজারদের অনুমতি থাকলে তবেই আপনার ট্রানজেকশন সফল হবে। এক কথায় পৃথিবীতে যত কম্পিউটার এই প্রজেক্ট এর মধ্যে রয়েছে তারা সবাই ব্লকচেইন নিয়ন্ত্রণ করে। এটি নিয়ন্ত্রণ করার কোন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক নেই। পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

যারা ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে একে নিয়ন্ত্রন করার কাজে সাহায্য করছে তাদেরকে বলা হয় নোড। আর এই নোড এর একটি অংশ হচ্ছে মাইনার। অর্থাৎ যারা ব্লকচেইন মাইনিং করেন তারাই মাইনারস। যখন ব্লকচেইনে নতুন কোনো তথ্য সংযুক্ত হয় তখন এই মাইনারদের কাজ হচ্ছে এই তথ্যকে ভেরিফাই বা যাচাই করা| যে ব্যক্তি এই তথ্য সংযুক্ত করেছে সে সঠিকভাবে এই তথ্য সংযুক্ত করেছে কিনা বা এখানে কোন অসাধু উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে কিনা।

এই সবকিছুই ভেরিফাই বা যাচাই করা হয় মাইনারদের দ্বারা। যারা এই ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত তারা সবাই দেখতে পারবে যে কোন সময় কোন তথ্য বা ব্লক সংযুক্ত হচ্ছে। কোন তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন পরে না।

যেহেতু অন্য ইউসারদের ভেরিফিকেশন ছাড়া একটি ট্রানজেকশন করা যায় না। শুধু একাই কাজটি সম্ভব নয়, তাই এই প্রযুক্তি ডেটা ষ্টোর ও ‍শেয়ার করার বর্তমান সময়ের সবচাইতে নিরাপদ প্রযুক্তি।

আবার এই প্রশ্ন হতে পারে, যেহেতু ট্রানজেকশনগুলো সবার সামনে উন্মুক্ত, তাই প্রাইভেসি কিভাবে রক্ষা হবে?

এখানে যেই আইডি দিয়ে ট্রানজেকশন এপ্রুভ করা হবে, সেই আইডিই একমাত্র আপনার পরিচয় বহন করে। কিন্তু এর নেপথ্যে কে এই আইডি র মালিক, তা জানা সম্ভব নয়। সুতরাং প্রাইভেসি রক্ষা হবে।

যদিও ইন্টারনেটে কোনো কিছুই একেবারে নিরাপদ বলা চলে না। এর পরেও যেহেতু একজনের দ্বারা একটি ট্রানজেকশন সম্পন্ন হয় না, সবার অনুমতি প্রয়োজন হয়, তাই কেউ অসাধু উপায়ে কোনো একজনের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে কোনো ট্রানজেকশন করতে পারবে না। এর জন্য সবার কম্পিউটারের নিয়ন্ত্রন নিতে হবে। আর সেটি অলমোস্ট ইমপসিবল। তাই এখন পর্যন্ত সবচাইতে নিরাপদ প্রযুক্তি হিসেবে ব্লকচেইনের নাম উঠে আসে।

ব্যাংকিং, টাকা-পয়সা লেন-দেন, তথ্য আদান-প্রদান ও স্টোর করা, ভোটিং, ওয়েব সহ অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্যাংকিং এর ক্ষেত্রে হলে এর নিরাপত্তা অনেক বেড়ে যাবে। ভোটিং এ ব্লকচেইনের ব্যবহার হলে এর সচ্ছতা ও নিরাপত্তা থাকবে। আপনার ভোট আপনি কাকে দিচ্ছেন, কে কত ভোট কার থেকে পাচ্ছে, এগুলো সবার সামনে উন্মুক্ত থাকায় ভোটের ক্ষেত্রে শতভাগ সচ্ছতা আনা সম্বব হবে।

এছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রে ব্লকচেইনের ব্যবহারের ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। এবং ভবিষ্যতের টেকনোলোজি হিসেবে ব্লকচেইন অনেক সম্ভাবনাময় একটি সমাধান হতে চলেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What is Lorem Ipsum?

Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries, but also the leap into electronic typesetting, remaining essentially unchanged. It was popularised in the 1960s with the release of Letraset sheets containing Lorem Ipsum passages, and more recently with desktop publishing software like Aldus PageMaker including versions of Lorem Ipsum.