আপনার তথ্য কি নিরাপদ?

কখনো ভেবে দেখেছেন কি আপনার তথ্য নিরাপদ কি না? আপনার ইন্টারনেট ব্যবহার কেউ নজরদারি করছে কি না? যাদেরকে আপনি নিরাপদ ভেবে আপনার বিভিন্য ব্যক্তিগত তথ্য নির্দ্বিধায় দিয়ে দিচ্ছেন, তারা কি আপনার তথ্যের নিরাপত্তা দিচ্ছে? কারো কাছে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে দিচ্ছে না তো?

ইন্টারনেটে আপনার কোনো তথ্যই একেবারে নিরাপদ নয়। সর্বক্ষণ আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে হচ্ছে। আমাদের ব্রাউজিং হিস্টোরি, কোথায় কোথায় লগইন করছি, পার্সোনাল চ্যটে কি কনভারসেশন হচ্ছে, এগুলো সব কিছু। এমন কি আমরা সরকারি ওয়েবসাইটগুলোকেও বিশ্বাস করতে পারি না। এই যুগ হচ্ছে তথ্য বা ডেটার যুগ। আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য খুবই বাজে ভাবে তথ্যের মালিকের বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের নিজেদের স্বার্থে।

সরকারি যেকোনো ওয়েবসাইটকে খুব সহজেই বিশ্বাস করছি এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ও খুবই ব্যক্তিগত তথ্যগুলো নির্দ্বিধায় দিয়ে দিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প কোনো পথও থাকে না। মনে করছি আমাদের তথ্য সরকার তো অবশ্যই থার্ড-পার্টি কারো কাছে দিয়ে দিবে না। এমনই হওয়ার কথা ছিল। অথচ বাস্তবে তা হচ্ছে না। সরকারি সাইটগুলোতে বিভিন্ন আবেদনের সময় আমরা আমাদের সঠিক ও খুবই ব্যক্তিগত তথ্যই দিয়ে থাকি। অথচ আমাদের সেই তথ্যগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আর নিরাপদ থাকছে না।

একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আমার ডিপ্লোমা ভর্তির আগে রেমিডিয়াল (ভর্তি পরীক্ষার মতো) পরীক্ষার জন্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB) এর ওয়েবসাইটে আমি রেজিস্ট্রেশন করি। এর কদিন পর থেকে আমার কাছে বিভিন্য বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে ফোন কল এবং এসএমএস আসতে শুরু করে। সেখানে তাদের প্রতিষ্ঠানের সুবিধাগুলো তুলে ধরে তারা মার্কেটিং করতে থাকে। আনুমানিক ২০-২৫ টি ফোন কল এবং এর চেয়েও বেশি এস এম এস প্রতিদিন আসতে থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এভাবে তাদের প্রচারণা চালাতে থাকে। কোনো এক পলিটেকনিক এর ফোন কোলে জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় পেয়েছেন আমার ইনফরমেশন? আমি তো আপনাদের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করিনি। তাতে তারা কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি। শুধু বলেছিলো আমাদেরকে স্টুডেন্টদের ইনফরমেশনের ফাইল দেওয়া হয়েছে। এবং আমরা এডভারটাইজমেন্ট করছি। আমার ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার আগ পর্যন্ত তারা প্রতিদিন কল এবং মেসেজ দিয়ে গিয়েছিলো। যা অনেক বিরক্তিকর ছিল।

যখন বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB) তে রেজিস্ট্রেশন করি তখন একমন কোনো লেখা ছিল না যে আমার এই তথ্য অন্য কোনো থার্ড-পার্টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দিবে। তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো? তারা কি আমার তথ্য বিক্রি করেছে বেসরকারি এই পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর কাছে? অস্বাভাবিক নয়, হতেই পারে এমনটি। শুধু আমার একার তথ্য তাদের কাছে গিয়েছে এমন নয়, যারা যারা পরীক্ষার জন্য (BTEB) এর ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করেছিলো তাদের সবার তথ্যই এভাবে বিনা অনুমতিতে বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোতে দেয়া হয়েছিল।

সরকারি একটি ওয়েবসাইটেই যদি আমাদের তথ্যের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে ব্যাপারটি খুবই দুঃখ জনক। এখানে যেটি হয়েছে তা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন যা একটি গুরুতর অপরাধ। কিন্তু বিচারকের বিচার কে করবে? সরকারি বিভিন্য প্রয়োজনে আমাদের অজান্তে খুবই ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে যা আমরা ঘুনাক্ষরেও টের পাচ্ছি না। এ পর্যায়ে হয়তো কোনো ভাবে মেনে নিবেন কিন্তু আমাদের তথ্য তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে যাওয়া কোনো ভাবেই মনা যায় না।

আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত এমন বহু ঘটনা ঘটছে যা আমরা অনেক সময়ই খেয়াল করি না। তথ্যের নিরাপত্তা এখন শুধু কাগজে কলমেই মানায়। বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এর বাস্তবায়ন সরকারি ক্ষেত্রেই নেই, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কথা বলাই বাহুল্য।

খুবই সতর্কতার সাথে চললেও কখনো না কখনো আমরা আমাদের তথ্য অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে নিরাপদ মনে করে দিয়ে দিচ্ছি। হতে পারে আমাদের NID এর তথ্য কোনো টেরোরিস্ট গ্রুপ এর কাছে চোলে গেলো। এমনটি হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

বর্তমান সময়ে Nowhere To Hide কথাটি খুবই সত্যি। ইন্টারনেটে আপলোড করা কোনো তথ্যই কখনো ডিলিট হয় না। কোথাও না কোথাও এর রেপ্লিকা রয়ে যাচ্ছে। Artificial Intelligence এবং Machine Learning এর কল্যাণে এখন একজন ব্যক্তির আপলোডকৃত সকল Data Analysis করে তার সম্পর্কে এমন তথ্যও জানা সম্ভব যা সে নিজেই জানে না। আমরা এর থেকে বাঁচতে পারবো না কারণ, এই যুগে ইন্টারনেটের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। তাই যতটুকু সম্ভব আমাদের যেকোনো তথ্য ইন্টারনেটে আপলোড করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজন না হলে কোনো তথ্যই কোথাও আপলোড করা বা কাউকে দেয়া যাবে না। তাহলে আমরা কিছুটা সিকিউর থাকতে পারব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

What is Lorem Ipsum?

Ipsum is simply dummy text of the printing and typesetting industry. Lorem Ipsum has been the industry’s standard dummy text ever since the 1500s, when an unknown printer took a galley of type and scrambled it to make a type specimen book. It has survived not only five centuries, but also the leap into electronic typesetting, remaining essentially unchanged. It was popularised in the 1960s with the release of Letraset sheets containing Lorem Ipsum passages, and more recently with desktop publishing software like Aldus PageMaker including versions of Lorem Ipsum.